Product details
শুঁটকি খাওয়ার উপকারিতা। শুটকির গুনাবলি।
শুঁটকি মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও সাবধানতা কি কি?
বাংলাদেশে
অনেক এলাকায় শুঁটকি মাছ খাওয়ার প্রবণতা প্রাচীন কাল থেকে। রুপচাঁদা শুটকি
বা লইট্টা শুটকি, ছুরি শুটকি, ছোট চিংড়ি শুটকি,গজার শুটকি,পুঁটি
শুটকি,কাঁচকি শুটকি, ছুরি শুটকি, ইচা শুটকি, লাল ইচা, মইল্যা, চেলা,
লইট্ট্যা, লাক্কা, রূপচাঁদা, পোপা, মিশালী, ফাইশ্যা, কেচকি, মাইট্যা, চোফি,
মনুনিয়া, লবন ইলিশ, ধইঞ্চাসহ আরো অনেক প্রকারের শুটকি।
শুঁটকি মাছ খেলে কোন উপকারিতা আছে কি?
আসলে
শুঁটকি মাছের আমিষ, প্রোটিন বা ক্যালসিয়াম তাজা মাছের আমিষ, প্রোটিন ও
খনিজ লবণের পরিমাণ থেকে অনেক বেশি আছে । ক্যালসিয়াম ও লৌহের বেলায়ও পরিমাণ
টা অনেক বেশী! । ছোট মাছের চিংড়ির শুঁটকিতে লৌহের পরিমাণ তাজা মাছের চেয়ে
অনেক বেশি। এটি রক্ত স্বল্পতা ও গর্ভবতী নারীরা খেলে উপকার পাবেন। যাঁরা
গরুর দুধ খেতে পারেননা অথবা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তারা বিকল্প উৎস
হিসেবে মাঝে মাঝে প্রোটিন হিসেবে শুঁটকি খেতে পারেন।
শরীরের
প্রোটিনের চাহিদা পূরণে শুঁটকি কার্যকর ভূমিকা পালন করে । রুচিবর্ধক
খাবারগুলোর মধ্যে শুঁটকি মাছ অন্যতম। এতে ভিটামিন ‘ডি’-এর (সূর্যের আলোতে
থাকে ভিটামিন ‘ডি’) পরিমাণ রয়েছে পর্যাপ্ত অনুপাতে। ভিটামিন ‘ডি’ হাড়,
দাঁত, নখের গঠন মজবুত করার জন্য যথেষ্ট জরুরি। শরীরের জন্য উপকারী অনেক
রকম খনিজ লবণ রয়েছে এই মাছে। খনিজ লবণ আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করে, দাঁতের
মাড়িকে করে দৃঢ়। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার আমিষ বা প্রোটিন ও কোলেস্টেরল।
যাঁরা কঠোর দৈহিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের জন্য এটি যোগ্য খাবার। সম্প্রতি
গবেষণায় জানা গেছে, নিয়মিত শুঁটকি মাছ খায় এমন ব্যক্তিদের ইনফ্লুয়েঞ্জা
জ্বর, যক্ষ্মা এই অসুখগুলো সহজে হয় না। এতে আয়রন, আয়োডিনের মাত্রা বেশি
থাকার জন্য দেহে রক্ত বাড়ায়, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে শক্তিশালী,
শরীরের হরমোনজনিত সমস্যাকে রাখে দূরে। শুঁটকি মাছ দেহে লবণের ঘাটতিও পূরণ
করে। তাই দূর হয় দুর্বলতা।
শুটকিতে ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাই ক্লোরাইথেন (ডিডিটি) বিষ প্রয়োগ
দেশে-
বিদেশের বিপুল চাহিদার এই শুঁটকির মাননিয়ন্ত্রন করা জরুরি হলেও এর
বর্তমানে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে
সবার মনে। শুঁটকিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে এতে নির্বিচারে চলছে কেমিক্যাল ও
রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং জাতীয় দৈনিকের
মাধ্যমে জানা যায় শুটকিতে ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাই ক্লোরাইথেন (ডিডিটি) নামক
একটি পাউডার জাতীয় ঔষুধের ব্যবহারের কথা। এই ঔষধটি ব্যবহারের ফলে মাছে
সহজে পচন ধরে না, পোকামাকড় বা ব্যাকটেরিয়া অক্রমণ করে না এবং শুঁটকি
দীর্ঘদিন ভাল থাকে। এর কম মূল্য এবং সহজলভ্যতা শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে একে
অধিক জনপ্রিয় করে তুলেছে। এছাড়া নানান ধরনের তরল ধরনের রাসায়নিকও শুটকিতে
স্প্রে করা হয়ে থাকে। জেলেদের মতে এই ঔষুধ মাছে দিলে তাতে ব্যাকটেরিয়া হয়
না, শুঁটকি হয় চকচকে ও দীর্ঘস্থায়ী। ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির অনুসন্ধানে উঠে
এসেছে সবিক্রন ৪২৫ নামে আর একটি মেডিসিনের নাম। এইসব রাসায়নিক পদার্থ বা
ঔষুধ আসলে একপ্রকার কীটনাশক, যা ফসল বা গাছের পোকামাকড় দমন করতে ব্যবহৃত
হয়ে থাকে। মানুষের পেটে এমন মেডিসিন প্রবেশ করলে হতে পারে বদহজম, পেটের পীড়া, খোসপচড়া, চর্মরোগ, লিভার ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজের মত
রোগ। পরিমানে অল্প হওয়ায় এইসব কেমিক্যালের প্রভাব আমারা তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি
করতে পারি না, কিন্তু ধীরে ধীরে কেমিক্যালগুলো আমাদের বডিসেলে জমা হতে থাকে
এবং দেহের কোষকে ধ্বংস করে ক্যন্সারের মত রোগ সৃষ্টি কারণ হয়। ঢাকা
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ জনাব খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই মারাত্মক বিষ
আমাদের স্নায়ু তন্ত্রে গিয়ে তাকে দুর্বল করে দেয় এবং তিলেতিলে আমাদের
মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। স্নায়ু বৈকল্য, জণ্ডিস, গডব্লাডার ক্যান্সার, পিত্ত
থলির পাথর, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য এইসব কেমিকেলযুক্ত
খাবারই দায়ী।
কেন শুঁটকিতে ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাই ক্লোরাইথেন (ডিডিটি) বিষ প্রয়োগ করা হয় ?
আবহাওয়ার
সংস্পর্শে অতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে শুঁটকির, আর আমাদের
দেশের জেলেদের সঠিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি ও সংরক্ষণের জ্ঞান না থাকায় এটি
অল্প সময়েই খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই সম্ভাব্য লোকসান এড়াতে ব্যপারীরা
বেছে নিয়েছে এই ক্ষতিকর ফরমানিল, বাসুডিন, নগজ, ডায়াজিনের মত বিষাক্ত
ঔষধগুলো। এই ঔষুধের প্রভাবে মাছে কোন গন্ধ থাকে না, এমনকি পচা মাছ শুঁটকি
করলেও গন্ধ শুকে বোঝা যাবে না কিছুই। এই কেমিক্যাল এতই ভয়াবহ যে মাছে ঔষুধ
দেওয়ার পর এর আসেপাশে কোন জীবিত কীটপতঙ্গও ঘোরাফেরা করে না। গর্ভবতী নারির
জন্য এই শুঁটকি বিপদজনক প্রমাণ হতে পারে। এর ফলে গর্ভের শিশু প্রতিবন্ধী,
দুর্বল, মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হতে পারে এমনকি গর্ভপাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে
দেওয়া যায় না। অধিক দিন এইসব ঔষধ শরীরে প্রবেশ করলে নারী ও পুরুষের প্রজনন
ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, অসময়ে বন্ধ্যত্ব বরনের নজিরও আছে কিছু জায়গায়।
চট্টগ্রাম এ ক্যান্সার রেট হাই হওয়ার জন্য ওখানকার মানুষের বিষাক্ত শুঁটকির খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করা হচ্ছে।
শুঁটকি
শুধু মানুষের খাদ্য হিসেবেই নয় মাছ ও মুরগীর খামারেও এর ব্যবহার ব্যপক।
কিন্তু ভেজাল এইসব শুটিকি মাছ মুরগীর খামারে ব্যবহার করলে শুটকিতে ব্যবহৃত
কেমিক্যাল ঢুকে যেতে পারে মাছ ও মুরগীর শরীরে। এতে করে না শুধু শুঁটকি
অন্যান্য মাছ ও মাংসও হয়ে যাচ্ছে খাবার অনুপযুক্ত এবং এসব অস্বাস্থ্যকর
খাবার খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য জটিল রোগে।
তাহলে আসুন, জেনে নিই আমাদের দেশের কোন ধরনের শুঁটকিতে কী কী উপাদান রয়েছে??
দেখুন প্রতি ১০০ গ্রাম শুটকিতে আমিষ, প্রোটিন ও খনিজ লবণ
১০০ গ্রাম ছোট চিংড়ির শুটকিতে রয়েছে : ৬২.৪ গ্রাম
প্রোটিন,৩৫৩৯ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম- ৩৫৪ মিলি গ্রাম ফসফরাস, সাথে ২৮ গ্রাম লৌহ ও ২৯২ক্যালরি।।
১০০
গ্রাম ছুরি শুঁটকি তে রয়েছে : ৭৬ দশমিক ১গ্রাম প্রোটিন, ৭৩৯মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম-৭০০মিলিগ্রাম ফসফরাস,. ৪ দশমিক ২মিলিগ্রাম লৌহ,ও ৩৮৩ক্যালরি।
১০০
গ্রাম টেংরার শুঁটকিতে রয়েছে : ৫৪দশমিক ৯গ্রাম প্রোটিন,৮৪৩মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম,,৪০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস,, ৫মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৫৫ক্যালরি।।
১০০
গ্রাম লইট্টার শুঁটকিতে রয়েছে: ৬১দশমিক ৭গ্রাম প্রোটিন,১৭৮১মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম,,২৪০মিলিগ্রাম ফসফরাস,২০মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৯৫ক্যালরি।।
১০০
গ্রাম ফাইস্যা মাছের শুঁটকিতে রয়েছে: ১১গ্রাম প্রোটিন,,১১৭৬মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম, ৪৭৮মিলিগ্রাম ফসফরাস,,১৮মিলিগ্রাম লৌহ ও ৩৩৬ক্যালরি।।
শুটকি খাওয়ার সতর্কতা সমূহঃ
♥
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সময় এর মাঝে প্রচুর লবণ দেওয়াহয়। তাই
এটি উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।(বিশেষ ক্ষেত্রে)।
♥যারা বাত ও কিডনির রোগী তাদের বেশি শুঁটকি মাছ খাওয়া উচিত নয়।
♥ যাঁদের কিডনিতে ক্যালসিয়াম পাথর
হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরাও শুঁটকি মাছ খুব ভালোই এড়িয়ে চলবেন,নাহয় বড় ক্ষতির আশংকা রয়েছে।।
♥বর্তমানে
শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকসমূহ যেমন ডিডিটি জাতীয় উপাদান
দেওয়া হয়ে থাকে।। তাই শুটকি মাছ রান্না করার আগে হালকা গরমপানিতে
ক্ষানিকক্ষন ভিজিয়ে রেখে বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ঝুঁকি কমে।
♥যদি আপনি বাড়িতে শুঁটকি মাছ সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে মাঝে মাঝে কড়া রোদে দিয়ে তারপরে সংরক্ষন করবেন।
আমাদের শুটকি মাছের বৈশিষ্ট্যঃ
১) আমরা পচা নয় তাজা বাছাই করা মাছ থেকে নিজেরা শুটকি তৈরি করি,
২) বাজারের শুটকিতে ৫০% লবন ব্যাবহার করা হয়, আমাদের শুটকি তে ১০ % লবন থাকবে,
৩)
বাজারের শুটকিতে কীটনাশক ব্যাবহার করা হয় দীর্ঘদিন সংরক্ষনের জন্যে,
আমাদের শুটকিতে কোন কীটনাশক ব্যাবহার করা হয় না, কারন আমাদের শুটকির
চাহিদা প্রচুর আর পুরান শুটকি বিক্রয় করি না,
৪) আমাদের শুটকি রোদে শুকানো হয়, হিটিং মেশিনে নয়,
৫) আমাদের শুটকিতে কোন বালি বা ময়লা পাবেন না, কারন আমরা অনেক যত্ন করে শুটকি তৈরি করি।